School History
মহাবিশ্বের প্রত্যেক সৃষ্টির পিছনে আবৃত আছে এক একটি ইতিহাস। সেই ইতিহাস হয়ত সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নয়ত কারো আর্তনাদে, ত্যাগে মহীয়ান। কালিনগর ফাসিয়াতলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানটি আপনা-আপনি আজকের অবস্থানে পৌছায়নি। যুগের পরিক্রমায় অনেক ত্যাগী মানুষের শ্রম, ঘাম, সাধনার বলে এবং অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বিদ্যালয়টি স্বমহিমায় সমুজ্জল। হৃদয়ে অনুরনন সৃষ্টি করা সেই স্বর্নালী ইতিহাস হয়তবা অনেকেরই অজানা। পূর্ব পূরুষের মুখ থেকে শোনা বিদ্যালয় সৃষ্টি সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আজকের লেখনীতে উন্মোচন করার প্রচেষ্টা করব।
1950 সালের গোড়ার দিকের কথা। আড়িয়াল খাঁ, পালরদী নদী পরিবেষ্টিত কালকিনি উপজেলার কালিনগর ফাসিয়াতরা চরাঞ্চলটিতে তখনো শিক্ষার আলো এসে পৌছায়নি। সামান্য দ্বন্দ্বেই রাহাজানি, হানাহানি, খুন লেগে থাকত। সাধরন মানুষের জানমাল লুণ্ঠিত হত প্রায়শই। আধিপত্য বিস্তার, চর দখল, অন্যাযভাবে জুলুম, আইয়ামে জাহিলিয়া যুগকেও হার মানাত। ঢাল-তলোয়ার, বল্লম, সুরকি, বর্শা, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানীতে প্রকম্পিত হত আকাশ বাতাস। আড়িয়া খাঁ পালরদী নদীর স্রোত রক্তে রঞ্জিত হত নিমিষেই। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের কি কোন উপায় নেই?
তৎকালীন সমাজের আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সরদার বংশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন আবুল হাসেম সরদার। তিনি চিন্তা করলেন এই অশিক্ষিত, বর্বর ঘুনেধরা রক্তপিপাসু সমাজকে সভ্যতার শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে হলে শিক্ষা প্রসারন ব্যতিত অন্য কোন বিকল্প নেই। তার সাথে একাত্মতা পোষন করলেন তারই আপন ফুফাতো ভাই হাওলাদার বংশের তৎকালীন যুগপুরুষ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেয়া সাহেব নামে খ্যাত মরহুম মুন্সী জাবেদ আলী হাওলাদার। স্থানীয় রাজনীতিতে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তাঁদের একাত্মতার প্রয়াস অঞ্চলটিতে শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় অত্র এলাকায় প্রথম বিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন ঘটে। এরপরই পরিস্থিতির পট পরিবর্তন ঘটে যায়। তাদের এই মহতী উদ্যোগকে সাদরে স্বাগত জানান এলাকার বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী। এদের মধ্যে মরহুম আনছার উদ্দিন বেপারী, মরহুম শওকত আলী সরদার, মরহুম লেহাজ উদ্দিন আকন, মরহুম আরজ আলী সরদার, মরহুম দলিল উদ্দিন হাওলাদার, মরহুম মমতাজ উদ্দিন সরদার, মরহুম সোনামিয়া হাওলাদার মরহুম আঃ রব সরদার, মরহুম আঃ লতিফ সরদার প্রমুখ অন্যতম। এদের মধ্যে কেউ জমি দান করে কেউ অর্থ সহায়তা করে কেউবা নিরলস পরিশ্রম ও সুপরামর্শ প্রদান করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আঃ মান্নান মিয়া নামে কুমিল্লার এক ভদ্রলোক বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। 1951 সালের 1 লা জানুয়ারী জুনিয়র স্কুল হিসেবে বিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রা হলেও বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের স্বাক্ষী হয়ে 1969 সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক আঃ হামিদ (বাবুল) ও 1971 সালের এস.এস.সি পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী এলাকার কৃতী সন্তান জীবন্ত কিংবদন্তী বীরমুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদ মন্টু তালুকদার, আঃ মান্নান হাওলাদার, বি. এম. সিরাজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সরদার, আঃ আজিজ বেপারী সহ প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে বিদ্যালয়ের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছেন কালকিনি উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব হাবীবুর রহমান আজাদ, দ্বিতীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম ইউনুস সরদার, আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের সুখ দুঃখের নিত্যসঙ্গী বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান হাওলাদার, আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মোঃ হাফিজুর রহমান মিলন সহ আর ও অনেকে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী প্রথিতযশা সরকারী আমলা, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেদের পদ অলংকৃত করেছেন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। শিক্ষা প্রদানের জন্য রয়েছেন 17 জন এমপিওভুক্ত সুদক্ষি একঝাক তরুন শিক্ষক, দুইজন খন্ডকালীন শিক্ষক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক, একজন কম্পিউটার অপারেটর, সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে তিনজন খন্ডকালীন সহ মোট পাঁচজন কর্মচারী ।